[english_date]।[bangla_date]।[bangla_day]

কালের বিবর্তনে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে চুকনগর ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প।

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

সরদার বাদশা ,নিজস্ব প্রতিনিধি ।

 

অতি প্রাচীন শিল্পের নাম মৃৎশিল্প। আবহমান বাংলায় এই মৃৎশিল্পের বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে কুমার বা কৃম্ভকার। প্রাচীন কাল থেকেই এই শিল্পের সাথে জড়িত হিন্দু সম্প্রদায়ের পাল বর্ণের লোকেরা। পালরা মাটি দিয়ে কঠোর পরিশ্রমে সুনিপূন হাতে তৈজসপত্র তৈরির মাধ্যমে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। আশির দশকের দিকেও গ্রামের মানুষরা মাটির তৈর বিভিন্ন ধরনের হাঁড়ি, সরা, কলস, বাসন, বদনা, মুড়ি ভাজার খোলা, কোলা, ভাটি ও মঠসহ গৃহস্থালির নানা ব্যবহার করতো। আর এসব তৈরি হতো কুমারপল্লীতে। বিশ্বায়নের ফলে ওসব এখন অচল অতীত হয়ে হয়ে গেছে। এখন কুমাররা মাটির তৈরী নার্সারির ফুলফলের টব, দইয়ের পাতিলেই আর কিছু দেবদেবীর মূর্তি বানানোর কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। ফলে অনেকেই পেশা বদলাতে বাধ্য হয়েছেন। তারপরও এই পেশার সাথে জুড়িয়ে আসে চুকনগর ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্পের কিছু শিল্পকারা সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ,চুকনগর পালপাড়ায় কৃষ্ণ পাল তৈরী করছেন দেবদেবীর মূর্তি, হাঁড়ি, , কলসসহ মৃৎ শিল্পের কিছু জিনিস পাত্র কৃষ্ণ পাল বলেন, আগামী দুর্গ পূজা অনুষ্ঠানে তিনি বিক্রি করবেন। কিছু মাতৃকা শিল্প জিনিস তার জন্য তিনি তৈরি করছেন, আরেকটু সামনে গেলে দেখা হয় সন্তোষ পাল, নারায়ণ পাল,ও নিমাই পাল এর সঙ্গে তারা বলেন এই শিল্পটি আগের মতো আর নেই। এখন ভালো চলে না সারাদিন অন্য কাজ করলেও যে দিনমজুরি আসে এই কাজ করে সেটুকু আমাদের এখন আয় হয় না ,অনেকেই পেশা বদল করেছে। এখন মাত্র কয়েকটি পণ্য চলে, তবে গেল করোনায় সব বন্ধ থাকায় বিক্রি হয়নি কিছুই। আগামী দূর্গা পূজা উৎসবের জন্য সামান্য কিছু দেবদেবীর মূর্তি সহ বাচ্চাদের খেলার পুতুল, নৌকা ,ঘোড়া,মাটির ব্যাংক, কিছু মৃত্তিকা শিল্প জিনিস তৈরি করছে আমাদের পাড়ায় কৃষ্ণ পাল , দুর্গাপূজা উপলক্ষে বিক্রি করার জন্য। তাদের কাছে কষ্টের কথা শোনার পর জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল সরকারি সাহায্য সহযোগিতা আপনাদের আসে কিনা ,,? তাহারা বলেন আমাদের কোন সাহায্য সহযোগিতা সরকারি ভাবে আমরা পাইনা, আমাদের দুঃখ-দুর্দশা দেখার মত কেউ নেই, সব মিলিয়ে বড় কষ্টে জীবনযাপন করছি ভাই । আরেকটু সামনে গেলে দেখা হয়

নিমাই পাল এর সাথে তিনি বলেন শুধু কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের চাহিদা আছে বাজারে । কিন্তু টিকে থাকার মতো বাজারদর নাই ,একটি কলস বিক্রি হয় ২০টাকায় একটি খোলা তাওয়া বিক্রি হয় ৫০টাকা, খোলা বিক্রি হয় ৭০টাকায় সেই সঙ্গে মাটিসহ কাঁচামালের দুষ্প্রাপ্যতা পরিস্থিতি আরো কঠিন করে দিয়েছে। অপরদিকে আধুনিক সভ্যতা মৃৎপণ্যের জায়গাটা প্লাস্টিক, মেলামাইন ও অ্যালুমিনিয়ামের পণ্য দখল করায় ঐতিহ্যবাহী শিল্পটির আজ এই দশা। একসময় মাটির তৈরি জিনিসপত্রের বহুমাত্রিক ব্যবহার ছিল। এলাকার চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হতো। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে মাটির পণ্যবোঝাই ‘ভার’ নিয়ে গ্রাম ও মহল্লায় গাওয়াল করতেন কুমাররা। ভারে থাকত পাতিল, গামলা, দুধের পাত্র, পিঠা তৈরির পণ্য সড়া, চাড়ি (গরুর খাবার পাত্র), ধান-চাল রাখার ছোট-বড় পাত্র, কড়াই, , শিশুদের জন্য রকমারি নকশার পুতুল, খেলনা ও মাটির ব্যাংক, পশুপাখিসহ নানান পণ্য। ধান বা খাদ্যশস্য, টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতেন সেসব পণ্য। এখন এগুলো মুখে বলা ছাড়া কিছুই করার নেই ভাই ,বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখতে আর সংসার চালতে হিমশিম খাচ্ছি ,প্রভাত পাল, বলছেন মৃৎপণ্য তৈরিতে বিশেষত দরকার হয় এঁটেল মাটি, বালি, রং, জ্বালানি (কাঠ, শুকনা ঘাস ও খড়)। এখন এসব পণ্যের দাম বেড়েছে আগের চেয়ে কয়েক গুণ। মাটি সব সময় পাওয়া যায় না। দূরদূরান্ত থেকে আনতে খরচ বাড়ে। কিন্তু তৈরি পণ্য বিক্রিকালে যে দাম চাওয়া হয়, সেই দামে কিনতে চান না ক্রেতারা। তিনি বলেন, সরকারীভাবে কোন সহযোগীতে পাইনা, চেয়ারম্যান মেম্বারেরাও কোন খোজখবর নেয় না। বাপ-দাদার কাছে শেখা আমাদের এই জাত ব্যবসা আজও আমরা ধরে রাখছি। এখন মানবেতর দিন কাটালেও সেই সুদিনের অপেক্ষায় আজও সকাল-সন্ধ্যা পরিশ্রম করে যাচ্ছি।

 

উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা আবদুল ওয়াদুদ ও সমাজসেবা অফিসার সুব্রত বিশ্বাস বলেন কিছুদিন আগে আমাদের কে বলা হয়েছিল সত্বর কুমার ,নিম্ন অঞ্চলের লোক ও নিম্ন পেশার ব্যক্তিদের ,তালিকা তৈরি করে দিতে ,আমরা সেটার তালিকা তৈরি করে সরকারকে দিয়েছি এখনো সেটা জন্য কোন সাহায্য সহযোগিতা আসে নাই সাহায্য-সহযোগিতা আসলে আমরা তাদেরকে জানাবো।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *